logo

হিজাবের আড়ালে কোন দুষ্টচক্র

  • October 13th, 2022
Suman Nama

হিজাবের আড়ালে কোন দুষ্টচক্র

সুমন চট্টোপাধ্যায়

ঝুলে রইল হিজাব বিতর্কের নিষ্পত্তি। বৃহস্পতিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি একেবারে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় আপাতত মামলাটি হিমঘরে চলে গেল। এবার প্রধান বিচারপতি স্থির করবেন বৃহত্তর বেঞ্চে কবে মামলাটি আবার তোলা হবে। অস্যার্থ, আবার দিনের পর দিন ধার্য হবে, শুনানির পর শুনানি হবে, ততদিন কর্ণাটকের সরকারি শিক্ষায়তনে মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরে প্রবেশের অনুমতি পাবেনা।

মূল বিষয়টি ছিল মুসলিম মেয়েরা হিজাব পরে সরকারি শিক্ষায়তনে যেতে পারে কিনা।হঠাৎ করে বিবাদটি পাদপ্রদীপের তলায় চলে আসার কারণ ছিল কর্নাটকে বিজেপি রাজ্য সরকারের একটি নিষেধনামা যাতে সে রাজ্যের হাইকোর্ট অনুমোদনের সিলমোহর বসিয়ে দিয়েছিল। সেই আদেশের বিরুদ্ধেই সর্বোচ্চ আদালতে বেশ সাড়া জাগানো মামলা হয় খুব সম্প্রতি। এগারো দিন ধরে টানা শুনানি চলার পরে আজ শোনানো হল বিচারপতি হেমন্ত গুপ্ত ও সুধাংশু ধুলিয়ার দ্বিধা-বিভক্ত রায়। প্রথমজনের মতে কর্ণাটক সরকারের সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক, দ্বিতীয়জন মনে করেন সম্পূর্ণ বেআইনী।

বিচারপতি ধুলিয়া কর্ণাটক সরকারের আদেশের অযৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বৃহত্তর সামাজিক বাস্তবতার প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। বলেছেন,’ গোড়া থেকেই আমি কেবল একটি বিষয়কেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখেছি- এদেশে বাচ্চা মেয়েদের শিক্ষার হাল। এরা অনেকেই সংসারে বা বাড়ির বাইরে কাজ করে তবে ইস্কুলে যেতে পারে। এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করে আমরা কি তাদের শিক্ষার পথ আরও সুগম করছি?’

ধুলিয়ার শেষ কথা, ‘ ইট ইজ জাস্ট এ ম্যাটার অব চয়েস। পিরিয়ড।’

ছবি সৌজন্যে : Bar and Bench

বিচারপতি গুপ্ত ঠিক বিপরীত অবস্থানে দাঁড়িয়ে তাঁর রায়ে সাতটি প্রশ্নের অবতারণা করেছেন। তবে তাঁর মূল যুক্তিটি হোল ইসলামে হিজাব পরা না পরা মোটেই বাধ্যতামূলক নয়। সুতরাং কর্ণাটক সরকারের আদেশ কোনও সম্প্রদায়ের ‘ এসেনশিয়াল রিলিজিয়াস প্প্যাকটিশ’- এর পরিপন্থী নয়। সবচেয়ে বড় কথা সরকারি আদেশে তো কারও শিক্ষার অধিকার খর্ব করা হয়নি।

সরকার বলছে ইস্কুলের নিজস্ব ইংউনিফর্ম আছে, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সক্কলকে সেটা পরেই আসতে হবে। খুব একটা অন্যায্য কথা কী? ইস্কুলের নিজস্ব নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে হঠাৎ অসংজ্ঞায়িত সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি উঠল কেন, এ প্রশ্ন তোলা কী সঙ্গত নয়? নিস্তরঙ্গ জলে ঢিল ছুঁড়ে ঘোলা জলে মাছ ধরতে চাইছে কারা? এই প্রতিবাদ কি স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না সংগঠিত? অন্তত একেবারে গোড়ার দিকে? অনর্থক ইস্যু তৈরি করে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানো হলে আখেরে শেষ হাসিটি হাসবে কারা? মোদ্দা কথায় এমন একটি অপ্রীতিকর পরিস্থিতির দায় সত্যিই কার?

ঢোখে ঠুলি পরে, সংখ্যালঘুদের সাত খুন মাফ ধরে নিয়ে, ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়াটা এদেশের লিবারেলদের মজ্জাগত ব্যাধি। আর অকিঞ্চিৎকর কোনও অঘটন যদি বি জে পি শাসিত রাজ্যে হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা। বিতর্ক শুরু হওয়া ইস্তক সমমনোভাবাপন্ন প্রচারমাধ্যম গুলিতে আমরা আগুন ঝরানো সব লেখা পড়েই চলেছি। যেমন, ‘ দ্য ওয়্যার’ পোর্টালে জি অরুণিমা প্রথম সুযোগেই ইউজুয়াল সাসপেক্টদের কাঠগড়ায় তুলে দিয়েছেন।’ The hijab vs uniform controversy is a row engineered by the right wing in the BJP ruled state of Karnataka. With this a non issue becomes one that threatens the education of hijab Muslim students……’

একই সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে মায় নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনেও।’ The Karnataka government is controlled by the Bharatiya Janata Party led by Prime Minister Narendra Modi, a Hindu nationalist whose eight years in power have been marked by a rise in hate speech and religiously motivated violence.’

বিজেপি-র প্রচারে হাওয়া লাগে ঠিক এই ধরণের একপেশে, অর্ধসত্য প্রতিবেদন আর অবাঞ্ছিত গালাগালির কারণে। কেননা সত্যটা হোল কর্ণাটকের কলেজে হিজাব নিয়ে গন্ডগোলের সূত্রপাত ঘটিয়েছে মুষ্টিমেয় কয়েকজন মুসলিম মেয়ে এবং তাদের জনা পাঁচেক অভিভাবক যাঁরা সাংবাদিক বৈঠক করে প্রথম বিষয়টি মিডিয়ার নজরে এনেছিলেন। এদের সঙ্গে ‘দক্ষিণপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের আদৌ কোনও সম্পর্ক আছেকি?

এবার ঘটনার পরম্পরায় ভালো করে চোখ বোলানো যাক। গন্ডগোল শুরু হওয়ার অব্যবহিত পরে উদিপির ওই কলেজের অধ্যক্ষ রুদ্র গৌড়া সংবাদসংস্থা পি টি আই-কে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তার সারমর্ম মোটামুটি এই রকম। কলেজ প্রাঙ্গনে হিজাব পরে আসার ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, কেবল ক্লাসে ঢুকলে মুখের ওপর থেকে তা সরিয়ে দিতে হবে। হিজাব পরা নাসপরা নিয়ে কলেজের কোনও নিয়ম কানুন নেই, থাকার প্রশ্ন নেই কেননা গত ৩৫ বছরে একজনও এই কলেজে হিজাব পরে আসেনি। ওই কলেজে মোট মুসলিম ছাত্রীর সংখ্যা ষাট যার মধ্যে মাত্র পাঁচজন হিজাব নিয়ে শোরগোল তুলেছিল। বাকি চুয়ান্ন জনের একজনকেও কেউ জিজ্ঞাসা করেনি অধ্যক্ষ যা বলেছেন তা সঠিক কিনা। অবশ্য সত্যটা হোল এখনও পর্যন্ত কেউ অধ্যক্ষের কথার প্রতিবাদ জানাননি।

পিকচার আভি বাকি হ্যায় দোস্ত। এখন ইন্টারভেল। (চলবে)

3 comments

  1. স্কুল কলেজের নিজস্ব ড্রেসকোড বা ইউনিফর্ম আছে, ছাত্র ছাত্রীদের উচিত সেটাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা ও সেই সুনির্দিষ্ট পোশাক পরিধান করা। অহেতুক হিজাব, গেরুয়া উত্তরীয় বা রুদ্রাক্ষের মালা পরে বিতর্ক বাড়ানোর প্রয়োজন নেই, নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত।

  2. School college e hijab chollee, Supreme Court e o hijab chalbe to. Sekhane o kono ukil jadi hijab pore ashen takhon ki hobe? Je meyeta school College e hijab porlo take court room e atkano uchit ki?

  3. ‘হিজাব’ বিতর্ক জিইয়ে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে গিয়ে মুসলিম মেয়েদের (জরুরি) শিক্ষার ব্যাপারটা গৌণ হয়ে যায়!!

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *